বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি হিসেবে বিগত চার দশক থেকেই বিকাশমান তৈরি পোশাক রপ্তানির পাশাপাশি বিদেশে কর্মরত সম্মানিত প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বিশেষ করে ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরু থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ অনেকটাই কমে গেলেও চলতি ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে পবিত্র রমজান এবং ঈদকে ঘিরে প্রতিদিন গড়ে ৬০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসী কর্মীরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া তথমতে, ২০২২ সালের এপ্রিল মাসের ২১ দিনে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১৪০৭ মিলিয়ন ডলার। যা বাংলাদেশী টাকার অংকে ১২ হাজার ১৩০ কোটি টাকার সমান হয়। তবে রমজান মাস এবং ঈদ উৎসবকে ঘিরে ২০২২ সালের এপ্রিল মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত মোট ২.১০ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে আসতে পারে বলে আশা করা যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া তথ্যমতে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ৯ মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১৫.৩০ বিলিয়ন ডলার বা ১ লক্ষ ৩১ হাজার ৯১৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার সমপরিমাণ অর্থ। এদিকে শুধুমাত্র মার্চ মাসেই প্রবাসী কর্মীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১.৮৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স। ২০২০-২০২১ অর্থবছরের ১২ মাসে বাংলাদেশের মোট রেমিট্যান্স আয় হয় ২৪.৭৮ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আয় হয় ১৮.২০ বিলিয়ন ডলার। তাই আশা করা যায় যে, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশে আনুমানিক ৩০ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ রেমিট্যান্স হিসেবে আয় করতে পারবে বাংলাদেশ। এদিকে বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে, বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীরা রেমিট্যান্স পাঠালে ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকেই ২.৫% হারে বিশেষ প্রণদনা বা আর্থিক সহায়তা পাবেন আমাদের সম্মানিত হাসিনা সরকারের পক্ষ থেকে। যা আগে ছিল ২%। ইউকীপিডিয়ার দেয়া তথ্যমতে, ২০২২ সালের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশের নমিনাল জিডিপির আকার ৩৯৭ বিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে মোট জিডিপিতে এককভাবে প্রায় ৬.৫% অবদান রেখে যাচ্ছে রেমিট্যান্স। তাছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে অনেক আগে থেকেই বড় ধরণের অবদান রেখে দেশকে প্রতিনিয়ত রক্ষা করে যাচ্ছে প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্স।

যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেয়া তথমতে, চলতি ২০২২ সালের মার্চ মাস শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের স্থিতির পরিমাণ ছিল ৪৪.১৪৭ বিলিয়ন ডলার। তবে ২০২১ সালের আগস্ট মাসে দেশের সর্বোচ্চ ৪৮.০৬ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে পন্য ও সেবার আমদানি ব্যয় অবিশ্বাস্যভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় তা কিন্তু এক রকম নিশ্চিতভাবেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে উপর নেতিবাচক প্রভাব ও চাপ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) দেয়া তথ্যমতে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই/২১ থেকে মার্চ/২২ পর্যন্ত মোট ৯ মাসে মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৮.৬১ বিলিয়ন ডলার। যা ছিল কিনা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৩% বেশি। তবে রপ্তানি আয়ে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা গেলেও সেই সাথে লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে দেশের পন্য ও সেবার আমদানি ব্যয়। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে দেশে পন্য ও রপ্তানি শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য মোট ৬৮.৩৬ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছে দেশে।

তাই তৈরি পোশাক শিল্পখাত থেকে রপ্তানি আয়ের ৮২% অর্জিত হলেও এর বিপরীতে পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে প্রায় ৪৩% থেকে ৪৫% পর্যন্ত ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। তাই সব দিক বিবেচনায় বৈশ্বিক মহামন্দা এবং করোনা মহামারির মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কথা মাথায় রেখে যতটা সম্ভব অপ্রয়োজনীয় আমদানি ব্যয় হ্রাস করে হলেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আপাতত কমপক্ষে ৫০ বিলিয়ন ডলারের সীমায় ধরে রাখার বিষয়টি আমাদের গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত। সেই সাথে প্রতি বছরে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে দক্ষ কর্মী পাঠানোর মাধ্যমে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যেই ৩০ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আয়ের নুন্যতম লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং পর্যায়ক্রমে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
লেখক: সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman)
সহকারী শিক্ষক ও লেখক,
গ্রামঃ ছোট চৌগ্রাম, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ।