সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া ইউক্রেনের বেশকিছু সামরিক স্থাপনায় তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি অত্যাধুনিক ৯ ম্যাক গতি সম্পন্ন এয়ার লাউঞ্চড বেসড ‘কিনঝান’ হাইপারসনিক মিসাইল নিক্ষেপ করে সারা বিশ্বে এক আলোড়ন সৃষ্টি করে। যার গতি ছিল কিনা অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাক ৯ বা ১১,১৮৩ কিলোমিটার। মুলত হাইপারসনিক গতি সম্পন্ন নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ক্যাপবল কেএইচ-৪৭এম২ কিনঝাল এয়ার লাউঞ্চড বেসড মিসাইলটিকে সামরিকি বিশ্লেষকেরা রাশিয়ার ‘ডুমসডে ওয়েপনস’ বা ‘ধ্বংসের অস্ত্র’ বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। আর মনে করা হচ্ছে এর মাধ্যমে বিশ্ব আবারো নতুন এক হাইপারসনিক মিসাইল প্রতিযোগিতার যুগে প্রবেশ করল। আকাশে উড্ডয়মান উড়োজাহাজ, হেলিকপ্টার, যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনের গতি মাপার ক্ষেত্রে কিলোমিটার কিংবা মাইল এর বদলে ব্যবহার করা হয় ‘ম্যাক’ নামে একটি পরিমাপক। মুলত ১.০ ম্যাক মানে শব্দের সমান গতি ও দুরুত্ব।

১.০ ম্যাক মানে প্রতি ঘণ্টায় ৭৬৭ মাইল বা ১,২৪২.৫৪ কিলোমিটার গতি। সে হিসেবে বিবেচনা করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্ল্যাকবার্ড বিমানের গতি ছিল প্রতি ঘন্টায় ২,১৯৩ মাইল বা ৩,৫২৯ কিলোমিটার কিংবা ৩.২ ম্যাক গতি। অবশ্য বিমান কিংবা মিসাইল সিস্টেম বায়ুমন্ডলে যতই উপরে উঠবে, সেক্ষেত্রে তাপমাত্রা ততই কমে যাবে। এজন্য ১৩.৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১,২২৫ কিলোমিটার/ঘন্টা গতিকে আদর্শ মান ১.০ ম্যাক গতি ধরা হয়। যা সকল যুদ্ধবিমান, ড্রোন কিংবা মিসাইলের উপর কমনভাবে প্রযোজ্য। যদি ০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ম্যাক ১.০ গতি অর্জন করতে হলে সেক্ষেত্রে আকাশ যানটিকে ১,১৯৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় উড়তে হবে। এদিকে শব্দের চেয়ে কমপক্ষে ৫ গুণ বেশি দ্রুত গতি সম্পন্ন মিসাইল কিংবা এরিয়াল সিস্টেমের গতিকে হাইপারসনিক গতি বলা হয়। এক্ষেত্রে প্রতি ঘণ্টায় ৩,৮৩৬ মাইল বা ৬,২১৪.৩২ কিলোমিটারের বেশি দ্রুত গতি অর্জন করলে তাকে সাধারণত হাইপারসনিক গতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। উচ্চ প্রযুক্তির হাইপারসনিক গতির মিসাইল সিস্টেম ডিজাইন এণ্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অপেক্ষা রাশিয়া এবং চীন অনেকটাই এগিয়ে গেছে বলে মনে করা হয়। তবে অনেকটা দেরিতে হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হাইপারসনিক গতির ওয়েপন্স গবেষণায় ব্যাপকভাবে কাজ শুরু করে দিয়েছে এবং এই প্রযুক্তি অর্জনে সাম্প্রতিক সময়ে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে যাচ্ছে। তবে যুদ্ধক্ষেত্রে একেবারেই প্রথম সফলভাবে রাশিয়া এই জাতীয় অস্ত্রের প্রয়োগ করে বিশ্বকে আবার নতুন এক হাইপারসনিক উচ্চ প্রযুক্তির অস্ত্র প্রতিযোগিতার মুখে ঠেলে দিল।

বর্তমানে বিশ্বের বুকে মাত্র তিনটি দেশ যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন কার্যকরভাবে হাইপারসনিক প্রযুক্তি আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়েছে। তবে সেই কাতারে গবেষণার একেবারে প্রাথমিক স্তরে হলেও এবার চতুর্থ দেশ হিসেবে হাইপারসনিক গতির প্রতিযোগিতায় ভারত তার নিজের যোগ্য স্থান করে নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। চীন তৈরি করেছে উচ্চ প্রযুক্তির এয়ার লাউঞ্চ বেসড ১০.০ ম্যাক গতির সিএইচ-এএস-এক্স-১৩ হাইপারসনিক মিসাইল সিস্টেম। এয়ার লাউঞ্চড বেসড কিনঝাল হাইপারসনিক মিসাইলের পাশাপাশি রাশিয়া সাবমেরিন এবং ব্যাটল শীপ থেকে নিক্ষেপ করা যায় এমন অত্যন্ত শক্তিশালী হাইপারসনিক জিরকন ক্রুজ মিসাইল ডিজাইন এবং ম্যানুফ্যাকচারিং করছে। ১,০০০ কিলোমিটার রেঞ্জের স্ক্যামজেট ইঞ্জিন চালিত রাশিয়ার জারকন ক্রুজ মিসাইলের সর্বোচ্চ গতি ৯.০ ম্যাক বা ১১,০২৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা হবে। তবে বিশ্বের এক নম্বর সুপার পাওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তৈরি করেছে হাইপারসনিক গ্লাইড বডি (সি-এইচজিবি) সিস্টেম। যার গতি হবে কিনা অবিশ্বাস্যভাবে প্রায় ১৭.০ ম্যাক বা তার কাছাকাছি।
লেখক: সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman)
সহকারী শিক্ষক ও লেখক,
গ্রামঃ ছোট চৌগ্রাম, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ।
### অনলাইন কুইজ প্রতিযোগীতায় অংশ নিতে ভিজিট করুন আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ https://www.facebook.com/quizolympiad